এক "জিহাদী"র গল্প......... 💥
কি ভাবলেন ? এবার নিশ্চয়ই আসবে লম্বা দাড়িওয়ালা মাথায় পাগড়ি একজন, হাতে AK 47. সাথে বারুদের গন্ধমাখা বেশ কিছু নিরীহ মানুষের ছিন্নভিন্ন লাশ ! হতাশ হবেন মশাই।🛑
ইনি ভূপালের মানুষ, কিশোর বয়সেই ভালো কলেজে পড়ার জন্য বাবা মা পাঠিয়ে দেন বিলেতে। আর পাঁচটা ভারতীয়র মতো ওখানে গিয়ে সাহেব হলেন না, হলেন দেশপ্রেমে মত্ত স্বাধীনতাকামী এক স্বপ্নচারী। স্নাতক হয়ে দেশে ফিরে এলেন, খুঁজে বার করলেন বাঙলার বিপ্লবীদের। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী তীব্র আন্দোলনের বাণী তাঁর হৃদয় স্পর্শ করলো। রক্তে লাগলো সর্বনাশের নেশা!
তাঁর জন্মভূমি ভূপাল তখন একটা করদ রাজ্য। কাজ শুরু করে দিলেন এখানে, বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে। বলতে লাগলেন, হিন্দু ও মুসলমান একজাতি একপ্রাণ। বিভেদ যারা আনতে চায় তারা আমাদের দুষমন, ইংরেজদের দোস্ত । জাতীয়তাবাদের পথ ধরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করতে হবে জিহাদ, তবেই স্বাধীন হবে দেশ।
বৃটিশ প্রশাসনের নজরে পড়ে যেতে উচ্চপদস্থ চাকুরে বাবা গোপনে তাকে পাঠিয়ে দিলেন জাপান। এখানে এসেও বদলালেন না মানুষটি। পড়াশোনার আড়ালে কিছুদিন চাপা দিয়ে রাখলেন অন্তরের আগ্নেয়গিরি। শুরু করলেন একদিন 'নয়া ইসলাম' নামে এক পত্রিকা প্রকাশ করে। তখন জাপান ইংরেজদের বন্ধু, পুলিশ পেছনে লাগলো। সুযোগ বুঝে চলে এলেন মার্কিন মুলুকে।
নিজের চেষ্টায় খুঁজে বের করলেন প্রবাসী বিপ্লবী দের আড্ডা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আবহে তখন তাঁরা আমেরিকা ও জার্মানির ভূখণ্ডে বেশ সক্রিয়। ১৯১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বৃটিশ বিরোধী সমঝোতা করার জন্য Indo-Turkish মিশন নামে এক প্রতিনিধি দল পাঠানো হলো। উনি সেখানে ঠাঁই পেলেন।
ইস্তাম্বুল ঘুরে মিশন এলো কাবুলে। মিশনের নেতা রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ। তাদের উদ্দেশ্য তুর্কি নেতাদের সাহায্য নিয়ে আফগানিস্তানের আমীর হাবিবুল্লাহ কে ইংরেজদের বিরুদ্ধে নামানো। ভারতের স্বাধীনতার জন্য আমীরের সাহায্য চাওয়া হলো। অবস্থা অনুকূল বুঝে ১৯১৫ সালের ১লা ডিসেম্বর কাবুলে গঠন করা হলো ভারতের প্রথম স্বাধীন ইন্টারিম সরকার। ভূপালের স্বাধীনতাকামী মানুষটি হলেন এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ।
না, পাঠ্য ইতিহাস বইতে এর উল্লেখ নেই। এনার পুরো নাম আবদুল হাফিজ মহম্মদ বরকতউল্লাহ, সম্মান করে সবাই বলতেন মৌলানা বরকতউল্লাহ!
অন্তর্বতী সরকারকে স্বীকৃতি দেয় জার্মানি, হাঙ্গেরি ও তুরস্ক। জোর কদমে চলতে লাগলো আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক কাজকর্ম।
এলো ১৯১৭, বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় হলো তুরস্কের। আফগান আমীর ভয়ে আবার ইংরেজ ঘেঁষা হতে থাকলেন। বিপদ বুঝে তিনি চলে এলেন জার্মানি তে। বার্লিনের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল পার্টি তাঁকে সভাপতির পদে বরণ করে নিলো। এবার তিনি বন্দী ভারতীয় সেনাদের উৎসাহিত করতে লাগলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার ধরতে।
যুদ্ধের আগুন নিভে এলে ইউরোপের বহু দেশে ঘুরে স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রচার করতে লাগলেন। ১৯২১ সালে গেলেন রাশিয়ায়, কিন্তু সেখানকার প্রবাসী বিপ্লবীদের সাথে কথা বলে খুশি হতে পারলেন না। তারা যে ভারতের স্বাধীনতার ওপরে দুনিয়ার মজদুর স্বাধীনতার স্থান দিতে চায় !
ফিরে এলেন আবার জার্মানিতে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বের হতে লাগলো তাঁর লেখা। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের স্বাধীনতার ওপর দিলেন এক অবিস্মরণীয় ভাষণ।
ভেতরে ভেতরে কখন যে ক্ষয়ে গিয়েছিলেন তা বুঝতে পারেননি দুনিয়া ঘোরা এই বিপ্লবী সিংহ।
২০শে সেপ্টেম্বর ১৯২৭, নিভে গেলো জিহাদের আগুন, স্তব্ধ হলো রুদ্রবীণা। সেই কবে একদিন স্বাধীনতার সংকল্প নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, আর কোনদিনও ঘরে ফিরতে পারলেন না। দেখে যেতে পারেননি দেশের স্বাধীনতা, কিন্তু শেষ নিঃশ্বাস টুকু অব্দি নিবেদন করে গেছেন ঐ স্বাধীনতা লাভের সংগ্রামে। আজন্ম এই জিহাদী কে আমার আদাব🌹
কলমে ✍🏻 স্বপন সেন 🌲
" নিজে অজানাকে জানুন, জানা বিষয়েগুলিকে জানান "
ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য গ্রুপের নিয়মাবলী-
১) এই গ্রুপে সমস্ত প্রকার দলীয় রাজনীতির প্রচার নিষিদ্ধ।
২) ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক মৌলবাদী প্রচারের পোস্ট করা যাবে না।
৩) কোনপ্রকার বিজ্ঞাপন বা যৌনতা সংক্রান্ত ছবি, ভিডিও পোস্ট করা যাবে না।
৪) সম্মানহানিকর বিতর্ক, ব্যক্তিগত আক্রমন, ব্যক্তিগত ছবি বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় পোস্ট করা যাবে না।
৫) গ্রুপে আপত্তিকর কিছু দেখলে অ্যাডমিনদের জানান।
৬) সমস্ত পোস্টে গ্রুপের বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭) গ্রুপে অপভাষা প্রয়োগ বা কুরুচিকর মন্তব্য করা যাবে না।
৮) এই গ্রুপের সমস্ত অ্যাডমিন ও সকল সদস্য গ্রুপের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।
গ্রুপের নিয়ম অমান্যকারী যে কোন বাক্তিকে, কোন রকম বিতর্ক ছাড়া বহিষ্কার করা হবে।
আপনাদের সকলের সুস্থ আলোচনা ও মতামত সকলকে সমৃদ্ধ করবে বলে আমরা আশাবাদী।।
ধন্যবাদান্তে- অ্যাডমিন প্যানেল।